বাসাইলের বুকে সতত বিচরণশীল বিপুল জনগোষ্ঠির দৈনন্দিনতার জন্য প্রয়োজনীয় জল প্রকৃতিগতভাবে যোগান দিচ্ছে নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর-জলাশয়। বছরের একটি নির্দিষ্ট মৌসুমে চলাচলের জন্য প্রয়োজন জলপথের। সকল কিছুর উর্ধে কৃষিজ উৎপাদনের জন্য জলের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। বাসাইলে মোট জলাশয়ের পরিমাণ-৪৩০ হেক্টর। এখানকার প্রধান নদী বংশী বা বংশাই, লৌহজং ও ঝিনাই। খালের মধ্যে রয়েছে কুচিয়ামারার খাল, নয়ার খাল, মইষাখালীর খাল, ময়থার খাল, বেংড়া খাল, খসরুখালির খাল প্রভৃতি। তবে এসব খাল প্রায় ক্ষেত্রেই নদীর শাখা রূপে সৃষ্টি হয়ে আবার নদীতেই মিশেছে। বিলের মধ্যে বালিয়া বিল, কাউলজানী বিল, ডুবাইল বিল আকারে কিছুটা বড়। এছাড়া আরো ছোট ও মাঝারি আকারের বিল রয়েছে। যেমন- চাপড়া বিল, দেও বিল,পদ্ম বিল, চাটাই বিল, বারকাটি বিল, বার্থা বিল ইত্যাদি।
বংশী নদীঃ
ইহা বাসাইল উপজেলার পূর্ব সীমান্ত নির্ধারণী নদী। ‘‘পুরাতন ব্রহ্মপুত্র হতে উৎপন্ন হয়ে জামালপুরের নিকট দিয়ে প্রবাহিত হয়ে টাংগাইল জেলার মধুপুরে গিয়ে পৌঁছে বানার নদীর একটি ও ঝিনাই নদীর একটি শাখার সাথে মিলিত হয়ে দক্ষিণে টাংগাইলের মির্জাপুর হয়ে, ঢাকার কালিয়াকৈরে দুইভাগ হয়ে মূল ধারা তুরাগ নামে দক্ষিণ-পূর্বদিকে গিয়ে ঢাকার মিরপুর হয়ে বুড়ীগঙ্গায় পড়েছে। দ্বিতীয় ক্ষুদ্র ধারাটি কালিয়াকৈর হতে দক্ষিণমুখী সাভার হয়ে ধলেশ্বরীতে পড়েছে ( টাংগাইল জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য, পৃঃ ৯৫)’’। ‘‘এ জেলার মাঝারিধরনের নদীসমূহের মধ্যে বংশাই সবচাইতে দীর্ঘ। উৎপত্তিস্থল হতে সঙ্গমস্থল পর্যন্ত এটি দৈর্ঘ্যে ১০০ মাইল ( কোম্পানী আমলে ঢাকা, জেমস টেলর, পৃঃ ৭)’’।
ঝিনাই নদীঃ
উপজেলার পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়ে প্রবাহিত। ঝিনাই জামালপুরের বাউশী থেকে দুটি ভাগে ভাগ হয়ে একটি শাখা ডানদিকে বেঁকে যমুনার পূর্ব পাশ দিয়ে ভূয়াপুর থানার ৭ কিঃমিঃ দক্ষিণ-পশ্চিমে যোকার চরের কাছে ধলেশ্বরীর উৎসমুখের কাছে মিলিত হয়েছে। অপর শাখা দক্ষিণ-পূর্বমূখী হয়ে বাসাইল ফুলকী হয়ে বংশী নদীতে পতিত হয়েছে। অন্য অংশ দক্ষিণমুখী হয়ে বাসাইলের ফুলকী-আইসড়া, দেউলী, দাপনাজোর নথখোলা হয়ে দক্ষিণমুখী হয়েছে (টাংগাইল জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য, পৃঃ ৯৫)। ঝিনাই বাসাইল উপজেলার মধ্য-প্রবাহিনী নদী হওয়ায় এর সবটুকু সুযোগ-সুবিধা এলাকাবাসীগণ ভোগ করেন।
লৌহজং নদীঃ
লৌহজং যমুনার শাখা নদী। ভূয়াপুর থানা সদরের গাবসাড়া হতে উৎপন্ন হয়ে ভূয়াপুর থানা সদরের এক কিঃমিঃ উত্তরে পাঁচটিকরীতে ঝিনাইর সাথে মিশে দক্ষিণ-পূর্বাভিমুখী হয়েছে। এসময় নদীটি টাংগাইল-করটিয়া, বাসাইল সীমান্ত দিয়ে মির্জাপুর-জামুর্কী হয়ে বংশী নদীর সাথে মিলিত হয়। বাসাইল উপজেলায় এটি নাহালী ও মটরা গ্রাম দিয়ে বাসাইল অতিক্রম করে। নদীটি বর্তমানে প্রায় মৃত। যদিও একসময় নদীটি ছিল প্রবল খরস্রোতা। কেদারনাথ মজুমদার লৌহজং নদী সম্পর্কে নিম্নরূপ বিবরণ দিয়েছেনঃ ‘‘টাংগাইল মহকুমার অন্তর্গত বৈষ্ণববাড়ী হইতে যমুনার একটি শাখা বাহির হইয়াছে। ইহার নাম লৌহজঙ্গ। লৌহজঙ্গ নদী টাংগাইল, করটিয়া ও জামুর্কী প্রভৃতিস্থানের নিকট দিয়া প্রবাহিত হইয়া ঢাকা জেলার বংশাই নদীর সাথে মিলিত হইয়াছে।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS